ভূ-স্বর্গ নামে পরিচিত কাশ্মীর। এর রূপে এমনই মুগ্ধ হয়েছিলেন মোঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরযে কাশ্মীরকে স্বর্গের সাথে তুলনা করেছেন। কাশ্মীরের রূপের কথা নতুন করে বলার কিছু নাই। ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে এমন সবারই মনে সুপ্ত বাসনা থাকে জীবনে একবার হলেও কাশ্মীর ঘুরে আসার। প্রতি বছরই দেশের অনেক ভ্রমণ পিপাসুরা এই স্বর্গরাজ্য কাশ্মীরে ছুটে যায় এর অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে। কাশ্মীর হলো পৃথিবীর একটি ভুস্বর্গীয় সৌন্দর্যের প্রাকৃতিক লিলা ভূমি। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্রমণ পিয়াসুরা এই অঞ্চলে বছরের বিভিন্ন সময় ভ্রমন করতে আসেন।

ভূস্বর্গ বা কাশ্মীর মূলত হিমালয়ান পর্বতমালার দুটি রেঞ্জের মধ্যবর্তী একটি উপত্যকা অঞ্চল। এই অঞ্চলের দৈর্ঘ ১৩৫ কিলোমিটার এবং প্রায় ৩২ কিলোমিটার প্রস্থের এই উপত্যকার এক সাইডে হিমালয়ের মধ্য হিমালয় এবং অন্য পাশে বৃহৎ হিমালয় অবস্থিত। মধ্য দিয়ে চলে গেছে ঝিলাম নদী বা জেহলাম নামের এই নদী। দক্ষিণ দিকে অনন্তনাগ যাকে স্থানীয়ভাবে বলে ইসলামাবাদ, সোপিয়ান, কুলগাম ও পুলওয়ামা। মধ্যখানে বাডগাম ও গ্যান্ডরবাল ও শ্রীনগর এবং উত্তরে বারামুলা, বান্ডিপুরা ও কপুওয়ারা। এই দশটি প্রশাসনিক জেলায় বিভক্ত এই উপত্যকা। ভৌগোলিকভাবে কাশ্মীর বা এই ভূস্বর্গকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। সেন্ট্রাল, নর্থ ও সাউথ কাশ্মীর। সমগ্র জম্মু-কাশ্মীরে মোট জনসংখ্যা এক কোটি ২৫ লাখ। শুধুমাত্র কাশ্মীর উপত্যকার জনসংখ্যা প্রায় ৫৩ লাখ।

কাশ্মীর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়ঃ

বছরের যে কোন সময় কাশ্মীর ভ্রমণ করা যায়। আবহাওয়ার দিক থেকে কাশ্মীরের মৌসুম মূলত চারটি। গ্রীস্মকাল যা জুন, জুলাই এবং আগষ্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয়, শরৎকাল যা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর পযন্ত স্থায়ী হয়, তারপর শীতকাল যা ডিসেম্বর, জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং সর্বশেষ বসন্তকাল যা মার্চ থেকে শুরু হয়ে মে মাস পর্যন্ত থাকে। এই চার মৌসুমে কাশ্মীরে চার রকম রুপ মেলে। স্নোফল পছন্দ করলে অবশ্যই শীতকাল হবে আপনার ভ্রমণের আদর্শ সময়, তবে শীতে কাশ্মীর ভ্রমণ করতে হলে আপনাকে রাখতে হবে বাড়তি প্রস্তুতি। গরম কাপড়, গ্লাভস, বুট প্রয়োজন হবে। তবে শীতকালে সব এলাকায় ভ্রমণ নাও হতে পারে বরফের কারনে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আর যারা ফুলের কাশ্মীরকে দেখতে চান, তাদের জন্যে বসন্তকাল হবে ভ্রমণের জন্যে আদর্শ সময়। এই সময় টিউলিপ পাবেন, গাছে ফুল পাবেন এবং বাড়তি হিসেবে পাবেন বরফ তো পাবেনই এবং এই সময় সব কিছুর দাম অনেক বেশী থাকে। আপেল এর সিজন শুরু হয় শরৎকালে এই সময় ও যেতে পারেন। বর্ষাকালের শেষের দিকে সবুজ কাশ্মীরকে দেখার আনন্দ অন্যরকম। সাথে বাগান ভরা আপেল, জাফরান, আখরোট প্রভৃতি তো আছেই। এছাড়া বর্ষার যে আলাদা একটা সৌন্দর্য্য আছে সেটা আরও দ্বিগুন হয়ে যায় কাশ্মীরে। তাই এটার সৌন্দর্য্য ভিন্ন। এসময় অফ সিজন হওয়ায় সব কিছু দাম অনেক কম থাকে।

কাশ্মীর ভ্রমণের দর্শনীয় স্থানঃ

কাশ্মীর ভ্রমণের অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য বা ভ্রমণ করতে ভুলবেনা না নিচের জায়গা গুলিঃ

  • প্যাহেলগাম
  • সোনমার্গ
  • বালতাল
  • গুলমার্গ
  • শ্রীনগর
  • ডাললেক

প্যাহেলগামঃ শ্রীনগর থেকে পহেলগামের দূরত্ব ৯১ কিলোমিটার। জুলাই হতে অক্টোবর পর্যন্ত এখানে দেখা মেলে রোডের দুইPahelgam পাশে আপেল বাগান। এখানে আরো দেখার আছে লিদার নদী, চান্দেরওয়ারি, বেতাব ভ্যালি, আরিয়ান, কাশ্মীর ভ্যালী পয়েন্ট, কানিমার্গ। ঘোড়ায় বসে ঘুরে বেড়ানোর মজা পাবেন এই পহেলগাম। এখানে মিনি সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত বাইসারান। প্যাহেলগাম হোটেলে এক বা দুই রাত থেকে এর আসে পাশের সকল জায়গা গুলি দেখতে পারেন। ঘুরার জন্য ট্যাক্সি এবং ঘোড়া ব্যবহার করতে হবে।

সোনমার্গঃ শ্রীনগর থেকে সোনামার্গের দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। এখানে আছে ঝর্ণা, থাজিয়ান হিমবাহ। এছাড়াও দেখা মিলবে সিন্ধু নদীর আরো আছে স্লেজিং, স্নো বাইক ও ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা এবং এখান থেকে বালতাল ঘুরে আসতে পারেন। সোনমার্গ থেকে বালতালের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ রুপী।

শ্রীনগরঃ শ্রীনর শহরে প্রথমেই দেখা মিলবে পাহাড়ের চুড়ায় বরফের মতো সাদা তুষার। আছে মোঘল গার্ডেন, টিউলিপ গার্ডেন,dal lake হযরত বাল মসজিদ, ডাল লেক ও নাগিন লেক। সারা দিন গাড়ি ভাড়া নিয়ে এই শহরটি ঘুরে দেখলে ভালো লাগার মতো।

এই অঞ্চল গুলো ঘুরে দেখতে হলে প্রায় ১৫ দিনের মতো সময় লেগে যাবে।

তবে মোটামুটি ভাবে কাশ্মীরের এই উল্লেখিত স্থান গুলো ঘুরে দেখতে ৭ থেকে ৮ দিন সময় লাগবে।